তিসির বীজের উপকারিতা

 তিসির বীজের উপকারিতা 

তিসির বীজ বা ফ্ল্যাক্স সিড (Flaxseed)একটি সুপার ফুড যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার প্রোটিন ও লিগন্যান্স সমৃদ্ধ যাও ওজন নিয়ন্ত্রণ কোলেস্টেরল কমানো, হজমে সহয়াতা করে, প্রদাহ কমানো এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

তিসির-বীজ-খাওয়ার-উপকারিতা



তিসির বীজ গুড়া করে বা ভিজিয়ে খেলে পুষ্টিগুণ থেকে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।সকালে বা দই দিয়ে এই বীজ খেলেও উপকার পাওয়া যায়।তিসির বীজে থাকা ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ওজন কমাতে সাহায্য করে, পেট ভরা রাখে এবং বিপাকহার বাড়ায়।  অন্যান্য খাবারের চেয়ে ৮০০ গুণ বেশি লিগন্যানস থাকায় এই বীজটিকে সুপারফুড বলা হয়। 

পোস্ট সূচিপত্র:তিসির বীজের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত   


  • তিসির বীজ খাওয়ার উপকারিতা
  • তিসি বীজ খাওয়ার নিয়ম 
  • গর্ভ অবস্থায় তিসি খাওয়ার উপকারিতা 
  • চুলের জন্য তিসির উপকারিতা 
  • তিসির তেলের উপকারিতা 
  • ত্বকের জন্য তিসির উপকারিতা 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ 
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ 
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ 
  • উপসংহার 

তিসির বীজের খাওয়ার উপকারিতা

তিসি বীজ (Flax seed)যার বৈজ্ঞানিক নাম -(Linum usitatisdimum)এটি চীন ও মিশরের স্থানীয় শস্য। কয়েকশত বছর ধরেই স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে তিসি বীজ।ক্ষুদ্র এই বীজটিতে পাওয়া যাবে প্রয়োজনে খনিজ ও ভিটামিন। 
আরও পড়ুনঃ মেথি খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা 
সাধারণ খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়াতে অনেকে আজকাল নানা প্রকার বীজ খান।এর মধ্যে অন্যতম তিসি। এর মধ্যে অন্যতম তিসি।একটা সময় পর্যন্ত অনেক খাবারই রান্না করা হতো তিসির তেলে। তবে তিসির বীজ যে উপকারী এটা এখন অনেকেই জানেন। পুষ্টি উপাদানের ভরপুর এই বীজটি শরীরকে রোগমুক্ত করতে পারদর্শী। 

তিসির-বীজ-খাওয়ার-উপকারিতা



  • তিসির বীজ খাওয়ার ফলে আলফা-নিলোনেলিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।এই অ্যাসিড ব্রেনকে  কার্যকর করতে সহায়তা করে। সেই সাথে বাড়ে স্মৃতিশক্তিও।
  • তিসির বীজে অন্যান্য সব গুণের মধ্যে একটি হলো উচ্চ রক্তচাপ কমায়।কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত  হয়েছে এই তথ্য।
  • তিসির বীজে পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসম্মত ফাইবার।আমাদের দৈনিক ফাইবার চাহিদা প্রায় ৮ থেকে ১২% পূরণ করতে সক্ষম। যা আপনার হজম কার্যকে সহজ ও দ্রুত করবে। 
  • যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন তারা প্রতিদিন ডায়েটে তিসির বীজ রাখতে পারেন এতে উপকার পাবেন। 
  • তিসিতে থাকা লিগন্যানস উপাদান শরীরে 'ফাইটোইস্ট্রোজেনিক' রূপে কাজ করে। অর্থাৎ শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি পূরণ করে। 

তিসির বীজ খাওয়ার নিয়ম 

তিসির বীজ অনেক শক্ত হয়ে থাকে।এটি খাওয়ার জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা উচিত। এটি সরাসরি খাওয়া যায় অথবা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। 
 
  • সকালে খাবারেঃসকালের নাস্তা বীজ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে যেমন ওটমিল বা স্মুদি তৈরিতে এটি ব্যবহার  করা হয়।  
  • গুড়া করে খাওয়াঃতিসি বীজ পুরো অবস্থায় খেলে সহজে হজম হয় না।তাই এটি গুড়া করে বা বেটে খাওয়া উচিত।
  • পানি বা দুধেরঃ সঙ্গে তিসির বীজের গুড়া পানি বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে এটি আরো কার্যকর হয়। 
  • খালি পেটেঃ অনেক সময় খালি পেটে তিসির বীজ খেলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয় এবং পাচনতন্ত্র পরিষ্কার হয়। 
  • পরিমাণ নিয়ন্ত্রণঃপ্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ তিসি বীজ খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

গর্ভ অবস্থায় তিসি খাওয়ার উপকারিতা

তিসি বীজে লিনোলিক অ্যাসিড, আলফা-লিনেলিক অ্যাসিড বা ওমেগা-৩ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এগুলো গর্ব অবস্থায় অপরিহার্য,যেহেতু এগুলো ভ্রনের মস্তিষ্কে বিকাশের সহায়তা করে, বিশেষত্ব গর্ভকালীন অবস্থায় প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে। তাছাড়া গর্ভ অবস্থায় তিসি বীজ সেবন করা কোষ্ঠকাঠিন্যত রোধ করতে পারে যা গর্ভবতী মহিলাদের একটি সাধারণ সমস্যা।

গর্ভাবস্থায় তিসি খাওয়ার উপকারিতাঃ

  • এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ সাহায্য করে যা গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা।
পুষ্টির উৎসঃ
  • তিসি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ফাইবার ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা গর্ভ অবস্থায় শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডঃ 
  • তিসি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের ভালো উৎস, যা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ
  • ফাইবার উপস্থিতির কারণে এটি পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। 
সতর্কতাঃ
অতিরিক্ত তিসি খেলে হজম সমস্যা, পেটে গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। গর্ভ অবস্থায় যেকোনো নতুন খাবার শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য কারণ এটি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

চুলের জন্য তিসির উপকারিতা

আজকাল মানুষ স্বাস্থ্য বা সৌন্দর্যের জন্য প্রাকৃতিক জিনিস বেশি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। বিশেষত্ব যখন চুলের কথা আসে তখন অনেকগুলো ঘরোয়া প্রতিকারের চেষ্টা করে।চুল আমাদের সৌন্দর্য বাড়ায়। বিভিন্ন কারণে এই ক্ষয়ক্ষতি নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে এবং ভাঙতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার চুলকে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর করতে ব্যবহার করতে পারেন তিসির বীজের গুঁড়া। 

তিসির তেল
  • চুলের গোড়ায় তিসির তেল মালিশ করলে মাথায় ত্বকের রক্ত চলাচল ভালো হয় এবং চুল মজবুত হয়।
তিসির জেল
  • তিসির বীজ পানিতে ফুটিয়ে ঘন জল তৈরি করে নিন এই জেলটি মাথার ত্বক ও চুলে লাগিয়ে আধা ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়া কমায়
  • তিসির তেল চুলের গোড়া মজবুত করে এবং মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে যা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
চুলকে মসৃণ ও ঝলমলে করে 
  • তিসিতে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চুলের রক্ষতা দূর করে সেটিকে  সিল্কি ও উজ্জ্বল করে তোলে।
চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে 
  • তিসির বীজে থাকা ওমেগা-৩ অ্যাসিড চুলের ফলিকলকে পুষ্ট করে, যার ফলে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

তিসির তেলের উপকারিতা 

তিসি একপ্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।তিসির বীজ এবং খাদ্য-গ্রেড তিসির তেল স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয় এবং খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়।তিসির তেল ১০০০ বছর আগে থেকে মানুষ ব্যবহার করে আসছে বলা যায় মানুষ আদিম সভ্যতার শুরুর সময় থেকে তিসির তেল ব্যবহার শুরু হয় এবং তা এখনো বিদ্যমান আছে।

আরও পড়ুনঃতিসির বীজ খাওয়ার উপকারিতা

প্রধান প্রধান উপকারিতা সমূহঃ

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি কমায়
  • ডায়াবেটিস রোগে দৈনিক ১৩ গ্রাম তিসির তেল সেবন করলে মাত্র কয়েক  সপ্তাহের মধ্যেই মারাত্মক ঝুকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। 
কোলেস্টরেল কমায় 
  • এক গবেষণায় দেখা যায়, হাই- কোলেস্টেরল একজন রোগী যদি প্রতিদিন এক চা-চামচ তিসির তেল গ্রহণ করেন তাহলে কিছু সপ্তাহের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ 
  • তিসির তেল খাওয়ার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। 
ক্যান্সার প্রতিরোধ
  • তিসির তেলে থাকা আলফা-লিনোলিক অ্যাসিড(ALA) এবং লিগন্যান কোলন,স্তন,প্রোস্টেট  ক্যান্সারের ঝুকি কমায়।
হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য  
  • তিসি তেল কোলেস্টেরল কমাতে,রক্তচাপ  নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং ধমনী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে যা হার্ট ও স্টকে ঝুঁকি কমায়।
ত্বকের জন্য তিসির উপকারিতা 
তিসির বীজ বা তেল ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী।এটি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে,বলিরেখা কমায়,কোলাজেন উৎপাদন সাহায্য করে এবং ত্বককে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।তিসিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ অনেক বেশি। ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন,কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে তিসির বীজ থেকে তৈরি জেল। 

তিসির-বীজ-খাওয়ার-উপকারিতা





ত্বকের জন্য তিসির উপকারিতা 

ত্বক গঠন উন্নত করেঃতিসি বীজ ত্বকের সামগ্রিক গঠন উন্নত করতে সাহায্য করেএবং এটি একটি প্রাকৃতিক মশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে।
 
বলে রাখা দূর করেঃতিসির বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল ত্বকের দ্রুত বার্ধক্য রোধ করে, ফলে তোকে বলিরেখা পড়ে না।

তপ উজ্জ্বল ও মসৃণ করেঃপ্রতিদিন তিসির তেল,জেল ফেসপ্যাক  ব্যবহারে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। 

ওজন কমাতে তিসির বীজ 

তিসির বীজ ওজন কমাতে সহায়তা করে।রোজের ডায়েটে পুষ্টিগুণ বাড়াতে অনেকেই ইদানিং খাবারের যোগ করেছে নানা প্রকার বীজ তার মধ্যে অন্যতম হলো তিসির বীজ।তিসির বীজ খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল এটি গুড়া করে বা পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া।তিসির বীজ সরাসরি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে তাই এটি ভিজিয়ে গুড়া করে দই এর সাথে, রুটি বা অন্যান্য বেকড পণ্যের সাথে মিশে খেতে পারেন।প্রতিদিন সকালে তিসির বীজ ভিজানো পানি পান করলে উপকারী ও পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ 

তিসির বীজ একটি সুপার ফুড যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।তিসিতে থাকা লিগন্যানস যা একটি শক্তিশালী এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহ রক্ষা করে  বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়ক।বিশেষজ্ঞদের মতে তিসির বীজ, তেল খাওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ 

বিশেষজ্ঞদের মতে তিসির বীজে ওমেগা- ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্রসওয়্যার লেভেল কমাতে সহায়তা করে।তিসির বীজ রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে যা রোগীদের জন্য উপকারী। তিসি ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের  অন্ত্রের গতি বাড়ায়। যার কারনে ডায়াবেটিস রোগীদের গতি আসে, যার কারণে হজমে গন্ডগোল থাকে না।  বিপাকীয় উন্নতি হয়ে রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা উন্নতি করে।

উপসংহার 


তিসি বীজের পুষ্টিগুণ,স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং বহুমুখী ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে  খাদ্য তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় করে তুলেছে। সঠিক নিয়মে এটি খেলে যে হৃদরোগ,ডায়াবেটিস,ওজন নিয়ন্ত্রণ, হরমোন ভারসাম্য থেকে শুরু করে ক্যান্সার প্রতিরোধ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 
তিসি বীজ চাষ করে দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা বাংলাদেশকে কৃষি ও অর্থনৈতিক নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিতে পারে।আমরা যদি তিসির বীজ ব্যবহার সম্পর্কে আরো সচেতন হয় এবং এর পুষ্টিগুণ নিয়ে কাজ করি তবে এটি একটি সুস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় সুফল বয়ে আনবে।তিসি বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনার মতামত বা অভিজ্ঞতা আমাদের জানান। 

তিসির বীজ খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন







 








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url